শ্রমিকদের বেকার হওয়ার আশঙ্কা
মোহাম্মদ শামছুদ্দোহা, লামা (বান্দরবান):
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মশক্তি হল ইট ভাটার শ্রমিক। বান্দরবান পার্বত্য জেলার ৭টি উপজেলায় ৭০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে লামা উপজেলায় ৪০টি ইট ভাটা রয়েছে।এসব ইট ভাটায় কাজ করেছেন অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক। এর সঙ্গে উন্নয়নও জড়িত রয়েছে। ইট ছাড়া সমতল জেলা হতে পরিবহন করে এনে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ইটের বিকল্প এখনো কিছু গড়ে উঠেনি।
গত ৫ আগষ্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পরে অন্তবর্তীকালিন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের সমস্ত অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। পরিবেশ বান্ধব ব্লক ইট তৈরি করার নির্দেশাও দেওয়া হয়।পার্বত্য জেলাতে মোটেই ইট ভাটা করতে দেয়া হবে না। এমন সিদ্ধান্তে ইট ভাটা বন্ধ হলে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে চলমান কয়েক হাজার কোটি টাকার সরকারী-বেসরকারী উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন থমকে যাবে।
এতে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ভেস্তে যাওয়ার পাশাপাশি উন্নয়ন বঞ্চিত হবে এ জেলা।শত কোটি টাকার ক্ষতি হবে ইটভাটা মালিকদের। শক্ত প্রভাব পড়বে পাহাড়ের উন্নয়নমূলক কাজে। বেকার হয়ে পড়বে এ পেশায় নিয়োজিত অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক। তাই আগামী ৬ মাস পর্য্যন্ত ইটভাটা চালুর রাখার ব্যবস্থা গ্রহনে পরিবেশ,বন ও জলবায়ু উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন জেলার ঠিকাদার, নির্মাণ শ্রমিক, ইটভাটা ও পরিবহন সমিতির নেতৃবৃন্দ সহ জেলাবাসী। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময়ে ঠিকাদার, নির্মাণ শ্রমিক, ইটভাটা ও পরিবহন সমিতির নেতৃবৃন্দরা এ দাবী তুলে ধরেন।
জেলার লামা উপজেলারবিএনপি নেতা আমির হোসেন সহ অনেকে বলেন, শহর অঞ্চলের তুলনায় পার্বত্য এলাকায় বায়ু দূষণ যৌক্তিক পর্যায়ে আছে। তাছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে শিল্প কারখানা বা অন্য কোন ধরনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলা। এখানে ইট ভাটাগুলো অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান ও অন্ন যোগানের একমাত্র ভরসাস্থল। ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলে দেশের বিরাজমান এ পরিস্থিতিতে উপজেলায় চুরি ডাকাতি রাহাজানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা আরও বলেন, পার্বত্য জেলায় ঢালাও ভাবে পাহাড় কাটা হয় এ ধারনা ঠিক নয়। পাহাড় কাটা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন প্রতিনিয়ত আইনি পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। বাস্তবে যে সকল ইট ভাটা পাহাড় কাটার সাথে জড়িত নয়, যারা পুকুর বা বাঁধে ভরাট হয়ে যাওয়া মাটি থেকে ইট তৈরির মাটি যোগান দিয়ে থাকেন, তাদেরকে নিয়মনীতি মেনে ইটভাটা চালুর অনুমতি দেওযার ব্যবস্থা গ্রহনে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টার প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে। এ ছাড়া এই অঞ্চলের মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রনালয় বিষয়ক উপদেষ্টার এ ব্যাপারে সুদৃষ্টির জোড় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।
উল্লেখ্য ২০২৫ সাল পর্য্যন্ত মাটির তৈরি ইট বানানোর সরকারি গেজেট রয়েছে।এছাড়াও মাননীয় উচ্চ আদালতের আদেশ আছে। গত ৫ আগস্টের আগে ইটভাটাগুলোর মালিকরা সরকারী বেসরকারী ঋণ নিয়ে প্রায় শত কোটি টাকা লগ্নি করেছেন। এসব ক্ষতি পোষাতে আগামী ছয় মাস সময় চেয়ে পরিবেশ,বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা বরাবরে আবেদনও করেন ভাটা মালিকরা।
এ বিষয়ে লামা উপজেলার ইট ভাটা মালিক মো. খোরশেদ আজম ইট ভাটা স্থানান্তরের ব্যবস্থা নিতে হলে সময়ের প্রয়োজন আছে। ভ্যাট ট্যাক্স ও জমির উন্নয়ন কর সহ প্রায় ১০ লাখ টাকা হারে সরকারী কোষাগারে জমা করেন প্রতি ভাটার মালিক। আগামী ৬ (ছয়)মাস স্থানান্তরের সময় দিয়ে চলমান উন্নযন কাজ বাস্তবায়নের সুযোগ হওয়ার পাশাপাশি বড় অংকের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে ইটভাটার মালিকরা।
ইটভাটায় নিয়োজিত শ্রমিক আনোয়ার হোসেন, জমির উদ্দিন, মাহফুজ, দেলোয়ার হোসেন ও কামাল উদ্দিন বলেন, প্রতি বছরের মত এবছরও আমরা ভাটা মালিক থেকে আগাম টাকা করে নিয়ে পরিবারের জন্য খরচ করেছি। এখন ভাটা বন্ধ থাকলে দেনার দায়ে পালিয়ে বেড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। আমরা ভাটা চালুর দাবী জানাই।
ইট ভাটা বন্ধের খবরের পর কয়েকটি ভাটায় মজুদ থাকা ইট দাম কয়েক হাজার টাকা বেড়ে গেছে বলে জানান প্রবিণ ঠিকাদার করিমুল মোস্তফা সহ কয়েকজন। আরোও জানান, ইট ভাটা বন্ধ রাখা হলে সীমান্ত সড়কসহ জেলার বিভিন্ন বিভাগের চলমান রাস্তা ঘাটএবং প্রক্রিয়াধীন টেন্ডারের কাজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ থমকে পড়বে।
এদিকে বান্দরবান জেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল কুদ্দুস জানান, পার্বত্য বান্দরবান জেলার ইটভাটা গুলোতে স্থানীয় এবং পাহাড়ি-বাঙ্গালী মিলে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। এ পেশায় তাদের জীবন জীবিকা চলছে। এর বাইরে আরও প্রায় ৪০ হাজারের মতো পরোক্ক ভাবে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তিনি আরও বলেন, সমতল জেলা হতে পরিবহন করে বান্দরবান জেলায় উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব না।পাশ্ববর্তী জেলায় ইটভাটা করতে পারলে আমরা করতে পারবো কেন? আমরা ইটভাটা মালিকদের বাঁচাতে আমাদের অন্তত আগামী ছয় মাসের জন্য ইটভাটা করা অনুমতি দেওয়ার জন্য পরিবেশ,বন ও জলবায়ু উপদেষ্টার নিকট বিনয়ের সহিত জোর দাবী জানাচ্ছি। অন্যতায় আমাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।